সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৩

এখন শুধু লাশের অপেক্ষা সাভারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০২, 
হস্তান্তর ৩৯১
 রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপে সোমবার উদ্ধার তৎপরতার ষষ্ঠ দিন চলছে। উদ্ধারকাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা নবম পদাতিক ডিভিশন জীবিত উদ্ধারের জন্য ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা যন্ত্রপাতি দিয়ে সাবধানতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনার কথা বলেছিল। তবে স্বজনদের দাবি আর ধ্বংসস্তূপের গভীরে প্রাণ স্পন্দনের লক্ষণ দেখে অভিযান ১১১ ঘণ্টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। অবশেষে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হয়েছে। সে হিসেবে কোনো হতভাগ্য শ্রমিককে আর জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। এখন হাইড্রোলিক ড্রিল মেশিন এবং ক্রেনসহ ভারি যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত ৩৯৭ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে স্বজন এবং বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে হস্তান্তর করা হয়েছে ৩৮৫টি লাশ। সোমবার বেলা ৫টা পর্যন্ত জীবিত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে পাঁচ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অধরচন্দ্রের স্কোর বোর্ডে স্বজনদের কাছে ৩২৯ এবং হাসপাতালের মর্গে ৫২ জনের লাশ হস্তান্তরের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে  ৩০ এবং মিটফোর্ড মর্গে ২১ জনের লাশ অসনাক্ত অবস্থায় এখনো পড়ে আছে। ঢামেকের নিউক্লিয়ার মেডিসিন এবং আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্রের চিকিৎসকরা ডিএনএর নমুনা এবং সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি ইউনিট মাড়ির দাঁত সংগ্রহ করছে। বিকেলের মধ্যে এসব লাশ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সেনা বাহিনীর আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে এখন পর্যন্ত ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মোট উদ্ধার ২ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৩৭ জন জীবিত এবং ৩৮১ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে। এখন ধ্বংসস্তূপের সামনে ও পেছনে বুলডোজার এবং ক্রেন দিয়ে দেয়াল ভেঙে বের করা হচ্ছে। বেক্সিমকো ও ওরিয়ন গ্রুপের ক্রেন দিয়ে কংক্রিটের চাঁই টেনে বের করে সাভার সিটি করপোরেশন ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯০ টন কনক্রিট সরানো হয়েছে বলে জানায় আইএসপিআর।

এদিকে সাভারে অধরচন্দ্র মাঠে পুলিশের কাছে স্বজনদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৫ জন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাভার থানা পুলিশের কাছে ১ হাজার ২২৫ জন নিখোঁজের তালিকা রয়েছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা হয় চার জন। তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমইএচ) ভর্তি করা হয়েছে। অবশ্য তৃতীয় দিন থেকে যারা উদ্ধার হচ্ছে তাদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর। অনেকে হাসপাতালে মারা গেছেন।
 

বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

সাভারে মৃতের সংখ্যা ১৭৫, চলছে উদ্ধার অভিযান

সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ধসে পড়া রানা প্লাজার স্তুপ থেকে ১৭৫ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মরদেহ সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।হাসপাতালে রাখা মরদেহগুলোর নাম-পরিচয় দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি মানুষ।বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সাভার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলানউজকে এ সংখ্যা নিশ্চিত করেন। এছাড়া ১৩৩টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কথাও জানান তিনি।এর আগে সকাল ১১টার দিকে মৃতের সংখ্যা ১৫৫জনের  কথা জানিয়েছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দ্দী।সকাল ১০টা নাগাদ ১০৯টি মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন।পরে আরও কিছু মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন স্বজনেরা। পরিচয় শনাক্ত করার পরই স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।এখনো ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।উদ্ধার অভিযান শেষ করতে আরও ৩/৪দিন লাগবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষে জানানো হয়েছে।মর্মান্তিক এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪‘শ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

 

সাভারে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় সারাদেশে জাতীয় শোক

সাভারে রানা প্লাজা ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে।ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। ফলে অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক পালনের এ ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৯টার দিকে সাভারে অবস্থিত এ আটতলা ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল। আর তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত ছিল চারটি পোশাক কারখানা। বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ১৫৩জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য মানুষ। ভোরে আরও ৪০জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার ত‍ৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্যেএরইমধ্যে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথকভাবে শোক জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার শোকবার্তায় ধসের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং তাদের আত্দার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি এ ঘটনায় আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তাদের উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার শোকবার্তায় নিহতদের বিদেহী আত্দার মাগফিরাত এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন। এদিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে এনাম মেডিকেল

এনাম মেডিকেল (সাভার) থেকে: রানা টাওয়ার থেকে শুরু করে এনাম মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। মানুষ সামলানোর জন্য পুলিশ, সোনাবাহিনী ও ভলান্টিয়াররা কাজ করে যাচ্ছেন।আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আনা হচ্ছে। প্রতি মিনিটেই তিন থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের আনা হচ্ছে এনাম মেডিকেলে।নিখোঁজদের খোঁজে আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট ।রোগী আনার কাজে পুলিশ, সেনাবাহিনী, এনাম মেডিকেল কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়ভাবে ভাড়ায় চালিত অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে।কলেজের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রায় তিন থেকে চারশ’ রোগীকে এরইমধ্যে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালটিতে রোগী সংকুলান না হলে বাকিদেরকে সামনেই‌ অবস্থিত দ্বীপ ক্লিনিকে নিয়ে ‍যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।এদিকে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের চারপাশের বাতাস ভাড়ি হয়ে উঠছে।

সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছে আটতলা ভবন রানা প্লাজা ধ্বস

ঢাকা: ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক রানাকে ভবনটির বেসমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে আটতলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধসে পড়া ভবনটির ভেতরে কয়েক হাজার শ্রমিক আটকে আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ  ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।





 

 

চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন: রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ

জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, বাড়ি-ঘর ও দোকানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনায় রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা, ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সকল সহযোগী বাহিনীকে নেতৃত্ব দানের কারণে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়েও। সোমবার এ কে এম ইউসুফ নামে বেশি পরিচিত এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে তাকে গ্রেফতারের আবেদন জানানোর জন্য প্রসিকিউশন টিমকে অনুরোধও জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সোমবার দুপুর ৩টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থার রাজধানীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত এ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ও বিভিন্ন প্রশ্নের দেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন ও তদন্ত সংস্থার সদস্য মোঃ নূরুল ইসলাম।তদন্ত সংস্থা জানান, এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে রোববার পর্যন্ত তদন্ত করে ১১১ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন। এর সঙ্গে ৭০ খণ্ডে ২৩৪৬ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টস দেওয়া হয়েছে। এতে ইউসুফের বিরুদ্ধে আনা ১৫টি অভিযোগে আনুমানিক ৭০০ জনকে গণহত্যা, ৮ জনকে হত্যা, হিন্দু সম্প্রদায়ের আনুমানিক ২০০ জনকে ধর্মান্তরকরণ, আনুমানিক ৩০০ বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা এবং প্রায় ৪০০ দোকান লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউসুফের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৬ জন সাক্ষীসহ ৭১ জন সাক্ষী করা হয়েছে।তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, “জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে তদন্ত করেছেন। তারা শহীদদের পরিবারের সদস্য, মামলার বাদী ও বিভিন্ন সাক্ষীদের জবানবন্দি করে এবং বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। তদন্তকালে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তার ওপর ভিত্তি করে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ কে এম ইউসুফের নেতৃত্বে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়।” তিনি বলেন, “ইউসুফের নেতৃত্বে বাগেরহাট জেলার কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ কে এম ইউসুফ তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে একজন।”তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা, শান্তি কমিটির খুলনা জেলার চেয়ারম্যান এবং মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য ইউসুফের বিরুদ্ধে খুলনায় গণহত্যা, হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে নেতৃত্বে দেওয়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনেরও অভিযোগ আনা হয়েছে। ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা ও যুদ্ধপরাধে সক্রিয় সহযোগিতা দেন। এছাড়া খুলনায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীসহ পাকিস্তানি বাহিনীর সকল সহযোগী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) অভিযোগও আনা হয়েছে।
 প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, “১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালালি করার দায়ে মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে এ কে এম ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল এবং ইউসুফকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়েছে প্রসিকিউশন টিমকে। আমরা প্রসিকিউশনকে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) অভিযোগ আনারও অনুরোধ জানিয়েছি।”ইউসুফের অবস্থান ও গ্রেফতার সম্পর্কে তদন্ত সংস্থার সদস্যরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, “বিষয়টি আমাদের নয়। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি বাংলাদেশেই আছেন। সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে অ্যালার্ট করা আছে। সীমান্ত এলাকা ও বিমানবন্দরেও নজরদারি রাখা হয়েছে, যেন তিনি পালিয়ে যেতে না পারেন।”    সূত্র জানায়, বর্তমানে স্থায়ীভাবে রাজধানীতে বসবাসকারী ইউসুফ বার্ধক্যজনিত কারণে শর্যাশায়ী। তার ঢাকার বাসায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে৷ উল্লেখ্য, এর আগে জামায়াতের সাবেক-বর্তমান ৯ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের পর তাদের ৪ জনের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে, বিচার চলছে ২ জনের ও তদন্ত চলছে আরো ৩ জনের বিরুদ্ধে। জামায়াতের ১০ম শীর্ষ নেতা হিসেবে যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে ইউসুফকে। এছাড়া বিচার শেষ হয়েছে সাবেক এক জামায়াত নেতার, বিচার চলছে বিএনপির সাবেক-বর্তমান দুই নেতার আর তদন্তাধীন রয়েছে আরও ৬ জনের মামলা। শেষোক্ত ৯ জনের মধ্যে পলাতক ১ জন আর আটক রয়েছেন ৪ জন।    চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউসুফের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মুন্সি আজিম উদ্দিনের পুত্র৷ পাকিস্তানি আমলে খুলনা শহরের টুটপাড়ায় দিলখোলা রোডে এসে বসবাস শুরু করেন৷ ছাত্র জীবনে তিনি জমিয়তে তালাব-ই-আরাবিয়ার একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালে জামায়াতে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে খুলনা বিভাগের আমির ছিলেন। ১৯৬২ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে জামায়াতের প্রাদেশিক জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। ১৯৭১ সালে পূর্ব  পাকিস্তান জামায়াতের ডেপুটি আমির হন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর খুলনার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হন এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী গঠন করেন।জামায়াতের বর্তমান সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফ একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী। একাত্তরের এপ্রিলে ঢাকায় গঠনের পর পরই কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশে খুলনা জেলা শান্তি কমিটি গঠন করেন ইউসুফ। তিনি নিজেই এ কমিটির চেয়ারম্যান হন। খুলনা জেলা শান্তি কমিটির আওতায় ছিল তৎকালীন খুলনা সদর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট মহাকুমা। পাকিস্তান অবজারভারসহ সে সময়কার পত্র-পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।এরপর প্রত্যেক মহাকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও জামায়াত, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেন ইউসুফ। এ কে এম ইউসুফ রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। রাজাকার নামটিও তার দেওয়া। একাত্তরে আনসার বিলুপ্ত করে দিয়ে তিনিই প্রথম খুলনায় প্রতিষ্ঠা করেন রাজাকার বাহিনী। ৯৬ জন জামায়াত কর্মীকে নিয়ে খুলনার খান জাহান আলী সড়কের একটি আনসার ক্যাম্পে ১৩ মে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বাহিনী। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামসহ সে সময়ের সব সংবাদপত্রে এ খবর ছাপা হয়।তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউসুফের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো খুলনার নয়টি প্রধান নির্যাতন সেল। রাজাকার বাহিনীর ৯৬ ক্যাডার মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাস সেসব সেলে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ওপর। সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হতো শহরের প্রধান চারটি স্থানে।খুলনার তৎকালীন ভূতের বাড়ি (বর্তমানে আনসার ক্যাম্পের হেড কোয়ার্টার) ছিল তার রাজাকার বাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং প্রধান নির্যাতন সেল। আরও দু’টি প্রধান নির্যাতন সেল ও রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল বর্তমান শিপইয়ার্ড ও খালিশপুরে। এছাড়া পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মূল ক্যাম্প সার্কিট হাউস (ডাক বাংলো) এবং পাকিস্তানি বাহিনীর অপর চারটি ঘাঁটি হেলিপোর্ট, নেভাল বেস, হোটেল শাহিন ও আসিয়ানা হোটেলও হয়ে উঠেছিল এই বাহিনীর নির্যাতন সেল। প্রথম তিনটি নির্যাতন সেল পরিচালিত হতো সরাসরি রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে আর পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট চারটি ঘাঁটি যৌথভাবে পরিচালিত হতো। অন্যদিকে ডাকবাংলোর পাকিস্তানি বাহিনীর সদর দফতরেই ছিল শান্তি কমিটির সদর দফতর৷ সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক কর্ণেল শামসের রাজনৈতিক পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন ইউসুফ৷ আর অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই সংঘটিত হয়েছে গঙ্গামারি, সার্কিট হাউসের পেছনে ফরেস্ট ঘাঁটি, আসিয়ানা হোটেলের সামনে ও স্টেশন রোডসহ কিছু নির্দিষ্ট স্থানে।তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ইউসুফের কথামতো খালেক মেম্বার ও আদম আলীর মতো আরো কয়েকজন রাজাকার সে সময় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পরে আরো অসংখ্য নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে এবং নারী ধর্ষণ করেছে। রাজাকার বাহিনী গঠনের পর ইউসুফ মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থেকে বহু লোককে জোর করে ধরে নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন। যারা রাজি হননি, তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। তাদেরই একজন শহীদ আবদুর রাজ্জাক। একাত্তরের আষাঢ় মাসের একদিন রাজাকার খালেক মেম্বার রাজ্জাককে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে বলেন। রাজ্জাক তা প্রত্যাখ্যান করলে সে মাসের ১১ তারিখ সকালে খালেক মেম্বার ও অপর রাজাকার আদম আলী পুনরায় বাসায় এসে রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় রাজ্জাকের মা গুলজান বিবি জানতে পারেন, তার ছেলেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য মা গুলজান বিবি রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফের কাছে যান এবং তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে করজোড়ে অনুরোধ জানান। সে সময় ইউসুফের সঙ্গে খালেক মেম্বারও ছিল। তারা দু’জনই জানিয়ে দেন, রাজ্জাককে ছাড়ানোর ব্যাপারে কোনো অনুরোধেও কাজ হবে না। পরে গুলজান বিবি তার ছেলেকে আর পাননি। সন্ধান পাননি লাশেরও।একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান সরকার জাতীয় পরিষদের আসনগুলো শূন্য ঘোষনা করে৷ ইউসুফ শরণখোলা এলাকা থেকে এম এন এ নির্বাচিত হন। এসব এমএনএদের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে গঠিত ডা. মালেকের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় জামায়াতের দু’জন সদস্য ছিলেন। তাদের একজন এই ইউসুফ ছিলেন রাজস্ব, পূর্ত, বিদ্যুৎ ও সেচ মন্ত্রী। অপরজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আব্বাস আলী খান বেঁচে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর তারা দু’জনসহ ওই মন্ত্রিসভার সব সদস্য গ্রেফতার হন। বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইনের অধীনে স্বাধীনতার পর আর সকলের সঙ্গে ইউসুফেরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১৭ ডিসেম্বর পত্র-পত্রিকায় সে সংবাদ ছাপা হয়। বাংলার বাণী পত্রিকায় ওই সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘দালাল মন্ত্রী ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’।সংবাদটি থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালি করার অভিযোগে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাসহ ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। আদালতের রায়ে অন্য অনেকের সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় একেএম ইউসুফের। কিন্তু পরে সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় ১৯৭৩ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তি পান ইউসুফ।তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আব্বাস আলী খান ও মাওলানা ইউসুফসহ মালেক মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা সংবর্ধনা দেন। পরদিন দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তা নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায়, ওই অনুষ্ঠানে ইউসুফ বলেছিলেন, ‘যুব সমাজকে পাকিস্তান সৃষ্টির মূল লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি বলেই তারা আজ নিজেদের পাকিস্তানি ও মুসলমান পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে।’২৫ সেপ্টেম্বরের সংগ্রামের প্রথম পাতায় তেজগাঁও থানা শান্তি কমিটি মালেক মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরে দেখা যায়, এ কে এম ইউসুফ তার বক্তব্যে বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ইসলামের দুশমনরা এর অস্তিত্ব ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে এবং বিভিন্ন পন্থায় তারা এই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে।’ মার্চ মাসের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকেও ইউসুফ এই ষড়যন্ত্রের পরিণাম বলে উল্লেখ করেন।১৮ অক্টোবর সংগ্রামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, মালেক মন্ত্রিসভার রাজস্ব মন্ত্রী ইউসুফ বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের সাহসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’২৮ নভেম্বর করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে ইউসুফ বলেছিলেন, ‘রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মোকাবিলা করছে।’ তিনি রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান। পরদিন ২৯ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশ হয়।এছাড়া ১০ অক্টোবর খুলনার জনসভায়, ২৬ অক্টোবর সিলেটের জনসভায়, ১২ নভেম্বর সাতক্ষীরার রাজাকার শিবির পরিদর্শনকালে এবং বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব বক্তৃতা-বিবৃতি পরের দিন দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক সংগ্রামসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।এ কে এম ইউসুফ খুলনায় রাজাকার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে নেতৃত্বে দেওয়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার দায়িত্বও পালন করেন।এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা শাঁখারিকাঠি গ্রামের ৪০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে ওই মামলার বাদী নিমাই চদ্র দাস ও বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠিতে গণহত্যার শিকার শহীদ সুনীল দেবনাথের স্ত্রী মীরা দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের স্বজনদের নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এ অঞ্চলে ইউসুফের নেতৃত্বে চলে হত্যাযজ্ঞ। ইউসুফ প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার ও সাক্ষী শাহিনুল আলম সানা বলেন, “একে এম ইউসুফ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাট-খুলনা অঞ্চলে রাজাকার বাহিনী গঠন করে কয়েক হাজার নিরীহ গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার মুক্তিযোদ্ধারা খুশি। এখন তারা কুখ্যাত এ যুদ্ধাপরাধীর দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।”

শহীদদের স্বজন এবং মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ইউসুফের ফাঁসির দাবি জানান।

 

পিকেটার ধরা ট্যাক্সিচালককে পুরস্কার দেবে কে!

হরতাল চলাকালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের হাতেনাতে ধরতে পারলে ট্যাক্সিক্যাব চালককে পুরস্কৃত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু যোগাযোগের জন্যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যে নাম্বারগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে ফোন দিলে জানানো হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে কিছুই জানে না ট্রাফিক।’ নিউমার্কেট থানাও জানে না কিছুই।
মঙ্গলবার হরতাল চলাকালে নীলক্ষেত মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে নির্দেশিকাসহ একটি ব্যানার চোখে পড়ে। ‘হরতালচলাকালীন ট্যাক্সিক্যাব সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’য় মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ক্যামেরা মারফত দুষ্কৃতকারীর ছবি তুলে রাখার জন্যও বলা হয়েছে।
ব্যানারে দেওয়া ৫টি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হরতাল চলাকালে সন্দেহভাজন কোন যাত্রীকে গাড়িতে তুলবেন না, পথের মধ্যে কোথাও গাড়ি থামাবেন না।
গাড়ি চলাকালে চালককে কেউ অনুসরণ করছে কিনা পেছনে আয়না দিয়ে তা লক্ষ্য করতে এবং নিকটবর্তী পুলিশের সহায়তা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।
নির্জন বা বিরান গন্তব্যে যাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন ও ট্যাক্সি ক্যাবে অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও দুষ্কৃতকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষনা তো রয়েছেই। ব্যানারে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের চারটি নাম্বার দেওয়া হয়েছে চালকদের সহযোগিতার জন্যে।
কিন্তু ০১৭১১০০০৯৯০ নাম্বারে ফোন দিলে জানানো হয়- ডিএমপি থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনার কথা জানেন না তারা। ০১১৯৯৮০৬১১১ নাম্বারে ফোন দিলে অপারেটর ফজলু বাংলানিউজকে বলেন, “দুষ্কৃতকারীকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কৃত করা হবে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়নি তাদের। এ ব্যাপারে নিউমার্কেট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, এ ব্যাপারে কোন কিছু জানেন না তারা। যেহেতু ব্যানারে ট্রাফিক বিভাগের কথা বলা হয়েছে, তাহলে এটি তারাই জানবে।
দুষ্কৃতকারীকে ধরিয়ে দেওয়া বা ছবি তোলা দুঃসাহসিক চালককে পুরস্কৃত করার এ বিষয়টি তাহলে কে দেখবে জানতে চাইলে ডিসি ট্রাফিক (দক্ষিণ) আলমগীর কবির বাংলানিউজের কাছে জানতে চান, ব্যানারে কার নাম লেখা রয়েছে?
ট্রাফিক বিভাগের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে ট্রাফিক বিভাগ।’
কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বিষয়টি জানে না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাদের তো পলিসি সর্ম্পকে জানার দরকার নেই। তারা শুধু তথ্য নেবে। যেমন আপনি রিপোর্টার, আপনার জানার দরকার নেই আপনার মিডিয়ার পলিসি কি।”

 

মোবারকের বিচার শুরুর আদেশ

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি ঘটনায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
এ টি এম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ মঙ্গলবার এ মামলায় অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য শোনার জন্য ১৬ মে দিন রাখে। 
মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে ৩৩ জনকে গণহত্যা, তিনজনকে হত্যা এবং দুজনকে অপহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।
প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা বলছে, আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের মোবারক একাত্তরে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তৈরি রাজাকারের তালিকায়ও তার নাম রয়েছে।একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জামায়াতের রাজনীতি করলেও পরে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং এক পর্যায়ে আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। দুই বছর আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।একাত্তরে একটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোবারকের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।তখন হাই কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন তিনি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।এরপর তার মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
গত বছর ১৫ জুলাই মোবারক হোসেনকে দুই মাসের জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল।এরপর কয়েক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২ মাচ অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যনাল।গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
 

 

শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

‘শাহবাগে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন’

আইইবি থেকে: হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে খুনি, ধর্ষক, গুণ্ডাদের ভাড়া করে আনা হয়েছিল অভিযোগ করে সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেছেন, তাদেরকে মানুষ ভয় পায়নি।
শনিবার সকালে ইনস্টিটউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
কামাল রোহানী বলেন, “শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত জড়ো হয়েছিল। জামায়াত-শিবির অপশক্তির বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সেখানে।
তিনি বলেন, “আমরা সংঘবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে অপশক্তিকে প্রতিরোধ করি না বলেই তারা আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়।”

তিনি সবাইকে একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
“জামায়াত-শিবিরের অপকর্ম আমাদের একাত্তরের দোড়গোড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে” উল্লেখ করে কামাল লোহানী বলেন, “এবারের এই আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো পথ নেই।”
“জঙ্গিবাদ-ধর্মান্ধ রাজনীতি আমাদের ধ্বংস করতে চাইছে” উল্লেখ করে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নানা অর্জনের কথা জানিয়ে তিনি সব অর্জনগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি মানবিক-অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলার আহ্বান জানান। 

 

সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৩

 
প্রথম আলো
"প্রথম আলো এবং হাসনাত আবদুল হাই ক্ষমা চেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কার কাছে ক্ষমা চাইল তারা? আর এই অপরাধকে ক্ষমা করার অধিকার গায়ে পড়ে কে নিতে যাচ্ছে? ভুল এবং অপরাধের মধ্যে তফাৎ আছে; ভুল হয়তো ক্ষমা করা যায় কিন্তু অপরাধ ক্ষমাহীন। গতকালের গল্পটি লেখা এবং ছাপা ভুল নয় অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পেতে হবেই, নইলে এটা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

শাহবাগ গণজাগরণের মুল শক্তি ছিল নারীরা। আমরা বলেছিলাম এই আন্দোলন মাতৃমুখী, যেমন জাহানারা ইমাম ছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের আইকন। তেমনি আজকের শ্লোগান কন্যা লাকী আক্তাররা শাহবাগের আইকন। তাই নারীরাই হয়ে উঠেছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আক্রমনের লক্ষ্য। নারীকে আক্রমণ করে একই সাথে শাহবাগ জাগরণ এবং নারী প্রগতিকে ঘায়েল করতে চায় অন্ধকারের শক্তি। নারীকে আক্রমনের মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক অস্ত্র হচ্ছে যৌন কুৎসা। সেটাই করে চলেছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, বাঁশের কেল্লা। সেই পাপ যাত্রায় নতুন করে সামিল হোল হাসনাত আবদুল হাই। বাঁশের কেল্লার প্রচারণা হালে পানি না পেলেও হাসনাত আবদুল হাইের লেখা তাদের চুপসানো পালে আবার হাওয়া দেবে। অসংখ্য ফটোশপ যেটা করতে পারেনি সেটা তারা অবলীলায় করে দিলেন একটা গল্প লিখে। এখানেই হাসনাত আবদুল হাই আর প্রথম আলোর অপরাধ। একটা নিম্নমানের প্রচারণাকে তারা কৌলীন্য এনে দিল। এবার হাসনাতকে বলতে হবে তার এই কুৎসিত কল্পনার ভিত্তি কী, ভিত্তি না থাকলে উদ্দেশ্য কী? শ্লোগান কন্যা কয়জন? সে হিসেবে এটা ব্যক্তিগত মানহানিও কী নয়? শাহবাগ আন্দোলনে অংশ নেয়া সকল নারীর প্রতি এটা ভার্চুয়াল কুৎসিত যৌন কুৎসা নয়? শাশ্বত নারীত্বের অপমান নয়? আন্দোলনের মাতৃ প্রতিমূর্তির লাঞ্ছনা নয়?

এই জঘন্য কাজের জন্য প্রথম আলোর সাজ্জাদ শরিফ কে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি হাসনাত আবদুল হাইয়ের বাংলা অ্যাকাডেমি পদক প্রত্যাহার করতে হবে। হাসনাত আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে সরকার বাদী হয়ে মানহানির মামলা করতে হবে। বিইং সরি ইজ নট এনাফ ইন দিস রিগার্ড।"

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ সব ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ।

রোববার পহেলা বৈশাখের সমাবেশ শেষে সন্ধ্যার পর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৭ এপ্রিল সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় মতবিনিময় সভা, জামায়াত নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে ২৯ এপ্রিল বেলা ১১টায় আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি, ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার দিবসে শাহবাগে শ্রমিক মহাসমাবেশ এবং ৪ মে সংসদ অধিবেশন চলাকালে জাতীয় সংসদের সামনে মানববন্ধন করে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তুলে ধরা হবে।

এর আগে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ৩৩ মিনিট পর্যন্ত তিন মিনিট হাতে হাত বেঁধে সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করে তরুণেরা। আর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঙ্গলপ্রদীপ ও মোমবাতি তুলে ধরে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়।

বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে অসাম্প্রদায়িক ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তরুণরা।

 পৃথিবীর সব দেশের সব বাঙালি এক যোগে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে হাতে হাত ধরে সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ যুবারা।

পৃথিবীর সব দেশের সব বাঙালি এক যোগে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

সম্প্রীতির বন্ধনে যার যার অবস্থানে দাঁড়িয়ে পাশের ব্যক্তির হাতে হাত বেঁধে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে সংহতি জানায় জনতা।

বিকাল ৫টা ৩০ থেকে ৫টা ৩৩ মিনিট পর্যন্ত লাখো মানুষের এ কর্মসূচিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।

এ সময় ‘জয় বাংলা’, ‘জয় জনতা’, জয় শাহবাগ’ ধ্বনীতে প্রকম্পিত হয় প্রজন্ম চত্বর।

‘সম্প্রীতির বন্ধন’ কর্মসূচি ঘিরে পহেলা বৈশাখের সকাল থেকেই শাহবাগে চলে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচিও রয়েছে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের।

মঙ্গলপ্রদীপ না থাকলে সবাইকে মোমবাতি জ্বালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে।

এর আগে সকাল ৬টায় গণজাগরণ মঞ্চ রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এবং সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদে আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪ ডটকম

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

আল ফালাহ প্রেসে অভিযান: আমার দেশ’র ৫ হাজার কপি জব্ধ, আটক ১৯

 প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন আইন লঙ্ঘন করে অন্য একটি প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোয়  রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে অভিযান চালিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ৫ হাজার ১ কপি জব্ধ করেছে রমনা থানা পুলিশ। এসময় প্রেস থেকে ১৯ জনকে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রমনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বাংলানিউজকে জানান, “প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে শনিবার রাত দশটার দিকে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে বাদী বলেন, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন অ্যাক্টের ৩২ ও ৩৩ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অন্য একটি প্রেস থেকে ১২ ও ১৩ এপ্রিলের পত্রিকা প্রকাশ করে আইন লঙ্ঘন করে আমার দেশ।”

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালানো হয় বলে জানান ওসি

একই থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দীন বলেন, “জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শনিবার রাত দশটা থেকে সাড়ে বারটা পর্যন্ত আল ফালাহ প্রেসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আমার দেশ পত্রিকার ১৪ এপ্রিলের প্রকাশিত ৫ হাজার ১ কপি ও ১৩ এপ্রিলের ৩৩ কপি জব্ধ করা হয়। এছাড়া প্রেস থেকে ১২টি প্রিন্টিং প্লেটও জব্ধ করা হয়। অভিযানস্থল থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।”

এ ব্যাপারে প্রেসটির ব্যবস্থাপক খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “আমি জানতাম, আমার দেশ কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রেসে তাদের পত্রিকা ছাপানোর অনুমতি নিয়েছে। তাই পত্রিকাটি ছাপানোর জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামী পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল আমার দেশ কার্যালয় থেকে আটক করে পুলিশ। সেদিন রাতেই পত্রিকাটির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রেস সিলগালা করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দৈনিক সংগ্রামের আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস থেকে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ হয়ে আসছে।

রমনা বটমূলে বোমা হামলা ট্রাজেডি এক যুগেও শেষ হয়নি বিচার


 বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর কেটে গেছে এক যুগ। তবু আজও শেষ হয়নি এই বর্বরোচিত এই হামলার বিচারকাজ।
২০০১ সালের ওই নারকীয় হামলায় ১০ জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। কিন্তু এতদিন কেটে যাওয়ার পরও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্থরা অনেকে বিচারের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন।
 
ভয়াবহ এ বোমা হামলার পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি এবং দণ্ডবিধি আইনে আরেকটি মামলা হয়েছিল। ঘটনার ৭ বছর পর ২০০৮ সালে মামলা দুটিতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
ইতিমধ্যে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ মোট ১৪ জনকে এই মামলায় আসামী দেখানো হয়েছে।
 
দুটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির বিচার কাজ বলা যায় শুরুই হয়নি। আর দণ্ডবিধি আইনে দায়ের হওয়া হত্যা মামলাটিও সমন্বয়হীনতা এবং প্রয়োজনীয় তৎপরতার অভাবে আসামী এবং সাক্ষীদের হাজির না করার কারণে বিচার কাজ থেমেই গেছে বলা যায়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ও তাদের স্বজন এবং অপরাধীদের কাছে ভুল সংকেত যাচ্ছে।
 
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তির জন্য ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর এ মামলাটিতে গতি সঞ্চার হয়। ১৩৫ কার্যদিবসে ৮০ জন সাক্ষীর মধে ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করা হয়।
 
কিন্তু দ্রুতবিচার আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলটির বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় এটি ট্রাইব্যুনাল থেকে মেট্রোপলিটন সেশন কোর্টে চলে যায়। ফলে আর দশটি মামলার মতোই এ মামলাটিও গতি হারায়। মামলাটি নিয়ে কার্যত এখন আর কারোরই খুব একটা তৎপরতা নেই।
 
এদিকে কার্যকর কোন তৎপরতা না থাকার কারণে গত ৩ বছরে ঢাকার দ্বিতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে মাত্র ১২ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলার ৮০ জন সাক্ষির মধ্যে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৬২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
 
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম জাহিদ হোসেন জানান বিস্ফোরক আইনের মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশনার অভাবে থেমে আছে। কারণ দ্রুত বিচার আদালত-১ এর বিচারক একই আদালতে মামলা দুটির বিচার শেষ করতে চেয়ে হাইকোর্টের অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছরেও এর কোনও জবাব মেলেনি।
 
এদিকে আগামী ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে। মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু জানান, যদি হাজিরার দিনগুলোতে আসামী এবং সাক্ষীদের ঠিকমতো হাজির করা যায় তাহলে আড়াই বা তিনমাসের মধ্যে মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে আসামী এবং সাক্ষিদের নিয়মিত হাজিরার ওপর।
 
এছাড়া এ মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটোও হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এ মামলার ১৪ আসামীর মধ্যে বিচারে নির্দোষ প্রমানিত হবেন এমন কয়েকজন ব্যক্তিও দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিনা বিচারে জেলহাজতে আছেন।
 
১৪ আসামীর বিরুদ্ধেই আদালত অভিযোগ গঠন করলেও সব আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ৮ আসামী জেলহাজতে আটক আছেন। একজন আছেন জামিনে। আর ৫ আসামী সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানে না।
 
২০১১ সালের ৮ আগস্ট সংশ্লিষ্ট আদালতের তৎকালীন বিচারক বেগম চমন চৌধুরী এক আদেশে বলেন, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষিদের প্রতি একাধিকবার অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সত্ত্বেও প্রসিকিউশন মামলার সাক্ষিদের উপস্থিত করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় মামলাটি নিষ্পত্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
 
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১ (২) ধারার বিধান মতে পুলিশের দায়িত্ব সাক্ষি আদালতে হাজির করার। সাক্ষিদের বিরুদ্ধে সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়ার পর পুলিশ সে দায়িত্ব পালন করেনি। এই অবস্থায় সাক্ষির অভাবে মামলার ক্ষতি হলে পুলিশ কর্তৃপক্ষকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
 
ওই হামলার ঘটনার পর ওই দিনই বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ বাদি হয়ে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
 
বোমা হামলার ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।
 
অপর ১৩ আসামী হলেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসেন, শাহাদাত উল্লা জুয়েল, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা সাব্বির, হাফিজ জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মুফতি আব্দুল হাই।
 
আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন মাওলানা আকবর হোসেন।
 
মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদাত উল্লা জুয়েল, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শওকাত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও মাওলানা আব্দুর রউফ জেলহাজতে আটক আছেন। বাকিরা এখনও পলাতক।




বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা

বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে চারুকলা ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে। সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং অশুভকে বিতাড়ন করতে ৬০ ফুট লম্বা প্রতীকী সরীসৃপ নিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।

বিশালাকৃতির এক দানব সরীসৃপ, হাতি-ঘোড়া-বাঘ সব চলেছে অশুভ শক্তি বিনাশে।

আয়োজকরা জানান, চারুকলার সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ, রূপসী বাংলা হোটেলের মোড় থেকে আবার শাহবাগ, টিএসসি হয়ে চারুকলার সামনে মিলবে।
ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কারো হাতে বাঘের মুখোশ, কারো হাতে হাতপাখা, কেউবা নিয়েছেন একতারা-দোতারা। বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা।

প্রতি বছরই বর্ষবরণ উৎসবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রায় থাকে বিশেষ কোনো প্রতীক। এবারের প্রতীক স্বাধীনতার চার দশক পর যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শাহবাগের যে আন্দোলন বেগবান, তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবার পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে ৬৫ ফুট দীর্ঘ ভিনদেশি এক সরীসৃপ। দানবীয় এই প্রাণিকে ‘রূপক’ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হবে বাঙালির ঐতিহ্যের দিনটিতে, যা তাড়াবে অশুভ শক্তি।

বিশালাকৃতির এক সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ‘রূপ’, যেটি মূল থিমেটিক স্ট্রাকচার তৈরির কাজ প্রায় শেষ দিকে। সরীসৃপ এই প্রাণীটি ক্ষিপ্র গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ থেকে ছুড়ছে আগুন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের সমন্বয়ক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আগামীর ভবিষৎ তরুণ প্রজন্মসহ সবার দাবি যুদ্ধাপরাধীরে ফাঁসি, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ। সেই দাবিকেই শোভাযাত্রায় ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে রূপকের মাধ্যমে।”

বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের দিনটিতে রং-বেরঙের মুখোশ, শোলার পাখি, পেঁচা, প্রজাপতি, খরগোশ ও টেপা পুতুল, ঢাক-ঢোল-বাঁশি, লাঠি-বর্শা, তীর-ধনুক নিয়ে অংশ নিচ্ছেন মঙ্গলের যাত্রীরা।

মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য তারা বর্ষ শুরুর জন্য সে দিনটি হিসেব করছিল, তা এখন বাঙালির নববর্ষ

শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

চৈত্র সংক্রান্তি, বিদায় ১৪১৯

 চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা সনের শেষ দিন। শেষ দিন ঋতুরাজ বসন্তেরও। বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। ৩০ চৈত্র শনিবার মহাকালের বুকে ঠাই নিচ্ছে ১৪১৯। ১৪২০ বঙ্গাব্দের শুরু হবে রোববার। বৈশাখ বন্দনায় মেতে উঠবে বাঙালি।চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে ফেলে আসা বছরের হিসাবের খাতাকে লোকাচার-পার্বণে বিদায় জানানো হবে। নতুন উদ্যমে, মঙ্গল প্রত্যাশায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবে।নানা আচার-অনুষ্ঠান আর হালখাতার প্রস্তুতি নেওয়ার দিনও শনিবার। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর। বাঙালি বরণ করে নেবে বাংলা নববর্ষকে। সে সঙ্গে মূল্যায়ন হবে বিগত বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা। চৈত্র সংক্রান্তি বাংলার লোক সংস্কৃতির এমন এক অনুষঙ্গ, যা সর্বজনীন উৎসবের আমেজে বর্ণিল।
 বছরের শেষ দিনে যেমন নানা আয়োজনে বর্ষকে বিদায় জানানো হয় তেমনি চৈত্রের শেষ দিনে বৈশাখ বন্দনায় মেতে ওঠে বাঙালি।‘নব আনন্দ বাজুক প্রাণে’- এ মঙ্গল কামনার মাধ্যমে বিগত বছরের গ্লানি মুছে ফেলতে আবহমান বাঙালি মেতে উঠছে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে।শনিবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ১৪১৯ বঙ্গাব্দের সাফল্য-ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ, হতাশা ও ক্লান্তি হারিয়ে যাবে মহাকালের বুকে। নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা করবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২০। সনাতন ধর্মমতে, বছর ঘুরতে ঘুরতে সূর্য তার আলোক আর তেজঃশক্তিকে নিঃশেষ করে আলোকশূন্য হয়ে পড়তে পারে। সূর্যের তাপই শস্যের ফলনে সাহায্য করে, বারিপাত আনে, সুফলা হয় ধরা। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে তাই উদ্বিগ্ন কৃষকরা বাঁচার তাগিদে বর্ষার আগমনের দ্রুততা কামনা করেন। নানা মাত্রিক উৎসবের মাধ্যমে সূর্যের কৃপা প্রার্থনা করেন তারা। এখন সূর্য তার রুদ্ররূপে প্রতিভাত। তাই চৈত্র সংক্রান্তিতে নানা উপাচারের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বাংলা মাসের শেষ দিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকেও সনাতন ধর্ম মতে পূণ্যের কাজ বলা মনে করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশের নানা স্থানে হবে মেলা, উৎসব। রাজধানীতেও কয়েক বছর ধরে এ উৎসব ব্যাপকতা লাভ করেছে। কয়েকটি সংগঠন দিবসটি নানা আয়োজনে পালন করবে।

পহেলা বৈশাখে ওবামার শুভেচ্ছা

বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষি সব মানুষকে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাঙালিদের পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে  গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ডিবি পুলিশের একটি দল আমার দেশ কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আমার দেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বাংলামেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
                                  বাংলাদেশ
আমার দেশ বাংলাদেশ মুখ দিয়ে বলি কিন্তু কি করি আসলে ..........
দেশের মানুষ কি বলতে চায় কিন্তু কেউ বলতে পারে না ....... 
কালো পতাকা মিছিল।
বৃহস্পতিবার শিবিরের অবৈধ হরতালের প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল করবে গণজাগরণ মঞ্চ।
মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে বাংলামোটর, মগবাজার ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরবে।
এ সময় সবার হাতে কালো পতাকা থাকবে।
এছাড়াও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সারাদিন গণজাগরণ মঞ্চে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিবাদী গান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
জয় বাংলা।

জামাতে ইসলামীড় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সামান্য কিছু খবর।
আমরা দেশকে কি দিলাম ?

আমরা দেশকে এখন ও নিরাপদ করতে পারিনি কারন দেশে অনেক রাজাকার দিয়ে ভরা এই রাজাকারে জন্য আমার দেশে মানুষেরা ভয়ে থাকতে হয় । ৭১ এ স্বাধীন হবার পরও আমরা স্বাধীন পাই নি কারন বিপদ আসবে তা জানি না । ঘড় থেকে বের হয়ে নিরাপদ ভাবে ঘড়ে ফিরবো নাকি তা আজও জানি না কারন আমরা দেশ কিছু দিতে পারি নি ।
md .john